Monday 14 October 2019

ওমরফারুক(রা.) এর জীবনী


নাম ’উমার, লকব ফারুক এবং কুনিয়াত আবু হাফ্‌স। পিতা খাত্তাব ও মাতা হান্‌তামা। কুরাইশ বংশের আ’দী গোত্রের লোক। ’উমারের অষ্টম উর্ধ পুরুষ কা’ব নামক ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর সা. নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। পিতা খাত্তাব কুরাইশ বংশের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মাতা ‘হানতামা’ কুরাইশ বংশের বিখ্যাত সেনাপতি হিশাম ইবন মুগীরার কন্যা। ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ এই মুগীরার পৌত্র। মক্কার ‘জাবালে ’আকিব’- এর পাদদেশে ছিল জাহিলী যুগে বনী ‘আ’দী ইবন কা’বের বসতি। এখানেই ছিল হযরত উমারের বাসস্থান। ইসলামী যুগে ’উমারের নাম অনুসারে পাহাড়টির নাম হয় ‘জাবালে ’উমার’- ’উমারের পাহাড়। [ তাবাকাতে ইবন সা’দ ৩/৬৬]
হযরত ওমর (রাঃ) এর ঐতিহাসিক ঘটনা
পারস্যের নিহাওয়ান্দ প্রদেশের শাসনকর্তা হরমুযান। পর পর অনেকগুলো যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়বার পর এবং অগনিত মুসলমানকে নিজ হাতে হত্যা করার পর তিনি অবশেষে মুসলমানদের হাতে বন্ধী হলেন । হরমুযান ভাবলেন , খলিফা ওমর (রাঃ) নিশ্চয়ই তার প্রানদন্ডের হুকুম দেবেন, না হয় অন্ততঃ তাকে গোলাম হিসাবে কোথাও বিক্রি করে দেবেন।
কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) বিশেষ কর দেওয়ার ওয়াদায় হরমুযানকে ছেড়ে দিলেন। হরমুযান নিজ রাজ্যে ফিরে ওয়াদার কথা ভুলে গেলেন। অনেক টাকা-পয়সা ও বিরাট সৈন্য সমাবেশ নিয়ে তিনি আবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। অবশেষে হনমুযান পরাজিত হয়ে আবার মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। তাকে হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে হাজির করা হলে খলিফা জিজ্ঞেস করলেন,
: আপনিই কি কুখ্যাত নিহাওয়ান্দ শাসনকর্তা হরমুযান?
: হ্যাঁ খলিফা , আমিই নিহাওয়ান্দ এর অধিপতি হরমুযান।
: আপনিই বার বার আরবের মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছেন এবং বার বার অন্যায় যুদ্ধের কারন ঘটিয়েছেন?
: এ কথা সত্যি যে, আমি আপনার অধীনতা স্বীকার করতে রাজী হইনি, তাই বার বার যুদ্ধ করতে হয়েছে।
: কিন্তু এ কথা কি মিথ্যে যে, আপনাকে পরাজিত ও বন্দী করার পরও আপনার প্রস্তাবানুসারে সোলেহনামার শর্ত মতে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার আপনি সোলেহনামার শর্ত ভংগ করেছেন এবং অন্যায় যুদ্ধে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন? : এ কথা মিথ্যা নয়। : আপনি কি জানেন আপনার কি সাজা হবে?
: জানি, আমার সাজা মুত্যু এবং আমি সেজন্য প্রস্তত আছি।
: এবং এই মুহুর্তেই?
: তাও বেশ জানি।
: তা হলে আপনার যদি কোন শেষ বাসনা থাকে তা প্রকাশ করতে পারেন।
: খলিফা, মৃত্যুর আগে আমি শুধুই এক বাটি পানি খাব।
খলিফার হুকুমে বাটিতে পানি এল। হরমুযানের হাতে দেওয়া হলে খলিফা বললেন,
: আপনি সাধ মিটিয়ে পানি খেয়ে নিন।
: আমার শুধুই ভয় হয় পানি খাওয়ার সময়ই জল্লাদ না এক কোপে আমার মাথাটা দেহ থেকে আলাদা না করে দেয়।
: না হরমুযান, আপনার কোনই ভয় নেই। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এই পানি খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আপনাকে কতল করবে না ।
: খলিফা, আপনি বলেছেন এই পানি পান করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমায় কতল করবে না। ( বাটির পানি মাটিতে ফেলে দিয়ে) সত্যি
এ পানি আর আমি খাচ্ছি না এবং তাই আপনার কথা মত কেউই আমাকে আর কতল করতে পারবে না।
চমৎকৃত হযরত ওমর (রাঃ) খানিক চুপ করে থেকে হেসে ফেললেন। বললেন, হরমুযান: আপনি সত্যিই একটি নয়া উপায় বের করেছেন নিজেকে রক্ষা করার জন্যে। কিন্তু ওমরও যে আপনাকে কথা দিয়েছে তার খেলাপ হবে না। আপনি আযাদ, আপনি নির্ভয়ে নিজ রাজ্যে চলে যান।
হরমুযান চলে গেলেন। অল্পদিন পরে বহু সংখ্যক লোক নিয়ে আবার এলেন।খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে বললেন,
: আমিরুল মু'মিনিন! হরমুযান আবার এসেছে।
এবার সে এসেছে বিদ্রোহীর বেশে নয়, এক নব জীবনের সন্ধানে। আপনি তাকে তার অনুচরবর্গসহ ইসলামে দীক্ষিত করুন। হরমুযান আর বলতে পারলেন না। তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলো। হযরত ওমর (রাঃ) দেখলেন, লৌহমানব হরমুযানের দু'চোখ পানিতে হলহল করছে । হরমুযানকে তিনি আলিংগন করলেন।
(সুবহানাল্লাহ কি সুন্দর মনের ব্যাক্তি তিনি ছিলেন)
উমারের ইসলাম গ্রহণে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। যদিও তখন পর্যন্ত ৪০/৫০ জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে হযরত হামযাও ছিলেন, তথাপি মুসলমানদের পক্ষে কা’বায় গিয়ে নামায পড়া তো দূরের কথা নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করাও নিরাপদ ছিল না। হযরত ’উমারের ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন হলো। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন এবং অন্যদের সংগে নিয়ে কা’বা ঘরে নামায আদায় শুরু করলেন। ’উমার রা. বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহণের পর সেই রাতেই চিন্তা করলাম, মক্কাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহর সা. সবচেয়ে কট্টর দুশমন কে আছে। আমি নিজে গিয়ে তাকে আমার ইসলাম গ্রহণের কথা জানাবো। আমি মনে করলাম, আবু জাহলই সবচেয়ে বড় দুশমন। সকাল হতেই আমি তার দরজায় করাঘাত করলাম। আবু জাহল বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি মনে করে?’ আমি বললামঃ ‘আপনাকে একথা জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদের সা. প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর আনীত বিধান ও বাণীকে মেনে নিয়েছি।’ একথা শোনা মাত্র সে আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল এবং বললোঃ ‘আল্লাহ তোকে কলংকিত করুক এবং যে খবর নিয়ে তুই এসেছিস তাকেও কলংকিত করুক।’ [সীরাতু ইবন হিশাম]
শুক্রবার পবিত্র ২৭ যিলহজ্জ্ব ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পবিত্র শাহাদাত দিবস। হযরত ওমর ফারুক ( রা:)  হিজরী ২৩ সালে ২৪ যিলহজ্জ্ব তারিখে বুধবার মসজিদে নববীতে ফজরের নামাযে ইমামতি করার জন্য দাড়ালে হযরত মুগিরা ইবনে শোবা (রা:) এর একজন দাস আবু লুলু বিষাক্ত তরবারী দ্বারা হযরত ওমর ফারুক (রা:) কে আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ২৭ যিলহজ্জ্ব তিনি শাহাদাত বরণ করেন। হযরত ওমর (রা:)কে মসজিদে নববীতে হযরত সিদ্দিকে আকবর (রা:) উনার বামপাশে দাফন সম্পন হয়।

Sunday 13 October 2019

আবু বকর ( রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ব্যক্তিগত নাম ছিল আব্দুল্লাহ, কিন্তু আরবের প্রথামত তিনি তাঁর ছেলের নাম বকর থেকে আবু বকর (বকরের পিতা) নামে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আবু কোহাফা এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল উম্মুল খাইর সালমা। তিনি ৫৭২ খ্রীস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহানবী (সাঃ) এর একজন ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। তিনিই পুরুষদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দাবীর সত্যতাকে নিশ্চিত বলে গ্রহণ করেন এবং এভাবে ‘সিদ্দীক’ উপাধি লাভ করেন। তিনি মহানবী (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদীনা হিজরতের সময় তাঁর সহযাত্রী ছিলেন। তিনিই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর একমাত্র সাহাবী, যিনি তাঁর সাথে সেই সফরে ‘সাওর’ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
অন্যান্য আরব শিশুদের মতো আবু বকর তার বাল্যকাল অতীবাহিত করেন। দশ বছর বয়সে তিনি তার বাবার সাথে একটি বাণিজ্য কাফেলায় করে সিরিয়া যান। পরে তিনি বাণিজ্যকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তিনি সিরিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি স্থানে সফর করেছেন। এসব সফরের ফলে তিনি ধনী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়ে উঠেন। তার পিতা বেঁচে থাকলেও আবু বকর গোত্রের প্রধান হিসেবে সম্মান পেতে থাকেন।
আবু বকর শিক্ষিত ছিলেন এবং কাব্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। তার স্মৃতিশক্তি ভালো ছিল এবং আরব গোত্রসমূহের বংশলতিকা নিয়ে পাণ্ডিত্য ছিল।
নবীজি (সা.) এর সঙ্গে সম্পর্ক:
হজরত আবু বকর (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বয়সে দুবছর ছোট ছিলেন। তিনি ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে ১৮ বছর বয়সে নবীজি (সা.) এর বন্ধু হওয়ার অমূল্য দৌলত অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন সময়ে মক্কার নেতৃস্থানীয়দের একজন ছিলেন। নবীজি (সা.)-এর বয়স তখন ২০ বছর ছিল। এটিই ছিল তাঁদের পরস্পর বন্ধুত্বের সূত্রপাত। যা পরবর্তী সময়ে এমন গভীরতা লাভ করে যে তার নিদর্শন দুনিয়ায় বিরল। এবং তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে ৬১ বছর পর্যন্ত জীবনের এ ৪৩টি বছরে নবীজি (সা.)-এর নবুওতয়াতের স্বাদ ও সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেন।
হিজ্জ্বাতুল বিদা (বিদায় হজ্ব) এর পরে, যখন মহানবী (সাঃ) গুরুতরভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) কে দৈনন্দিন নামাযে ইমামতী করার নির্দেশ দেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর শোকাবহ ইন্তেকালের পর, হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁকে মহানবী (সাঃ)-এর আকস্মিক মৃত্যুতে উদ্ভূত একটি অত্যন্ত সমস্যা সঙ্কুল পরিস্থিতির সামাল দিতে হয়।
তাঁর খিলাফতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের একটি হলো পবিত্র কুরআনকে একস্থানে সংগৃহিত করা। যদিও মহানবী (সাঃ) স্বয়ং পবিত্র কুরআনের লিখন ও বিন্যস্তকরণ কাজ সুসম্পন্ন করেছিলেন,কিন্তু তখন পর্যন্ত তা বিবিধ চামড়ার টুকরা, বৃক্ষ পত্ররাজি এবং পাথরের ফালিতে লিখিত ছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) এই সকল বিছিন্নভাবে লিখিত অংশকে সংগ্রহ করে একত্রিত করেন এবং কুরআন সংরক্ষণের নিমিত্তে হিফযকারীদের ব্যবস্থাপনাকে পদ্ধতিগত ভাবে পূনর্বিন্যস্ত করেন।
অবদান
আবু বকরের খিলাফতকাল দুই বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী ছিল। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শাসন করলেও এসময়ে তিনি ইসলামত্যাগীদের দমন, সাসানীয় ও বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে সফল অভিযানের মতো সফলতা অর্জন করেন। আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গণ্য করা হয়।
প্রথম খলিফা হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে আবু বকরের আলাদা স্থান রয়েছে। তিনি একমাত্র খলিফা যিনি মৃত্যুর সময় সরকারি কোষাগারে তার ভাতার অর্থ পরিমাণ পরিশোধ করেছিলেন।[২৩] বাইতুল মাল নামক সরকারি কোষাগারের তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
ইসলামগ্রহণের পূর্বেও আবু বকর মদ পান করতেন না। কুরাইশ বংশে বংশলতিকা বিষয়ে তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল।
হযরত আবু বকর (রাঃ) পক্ষকাল অসুস্থ্য থাকার পর ৬৩৪ খ্রীস্টাব্দের ২৩ অগাস্ট পরলোকগমন করেন। তিনি ছিলেন সেই দশ আশীর্বাদপুষ্টদের একজন যাঁদেরকে মহানবী (সাঃ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন যে তাঁদের জান্নাতে ভূষিত করা হবে। তিনি দু’বছরের কিছু অধিককাল খিলাফতের মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

Saturday 12 October 2019

বিশ্ব৷ নবীর জীবন ও জন্ম


প্রথমে।
অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর কঠোর সতর্কবাণীঃ
কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে উক্ত হত্যা আরও ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হবে, যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয় যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক। যেমন, নবী-রাসুল, নিরস্ত্র, নারী, নিস্পাপ শিশু, নিজ পিতা-মাতা, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপ্রধান অথবা উপদেশদাতা আলিম।
এসব অমানবিক কাজ আমাদের নবির,আদর্শে নয়।
দলিল নং,১।উসামাহ ইবন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে এক জিহাদে পাঠালেন। আমরা প্রত্যুষে ‘জুহাইনার’ (একটি শাখা গোত্র) ‘আল-হুরাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময়ে আমি এক ব্যক্তির পশ্চাদ্ধাবন করে তাকে ধরে ফেলি। অবস্থা বেগতিক দেখে সে বললঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু আমি তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললাম।
কালেমা পড়ার পর আমি তাকে হত্যা করেছি বিধায়, আমার মনে সংশয়ের উদ্রেক হল। তাই ঘটনাটি আমি নাবী (সাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ ‘’তুমি তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর হত্যা করেছে! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে অস্ত্রের ভয়ে জান বাঁচানোর জন্যই এরুপ বলেছে। তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ ‘তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছ, যাতে তুমি জানতে পারলে যে, সে এ কথাটি ভয়ে বলেছিল?’’ বুখারী ৬৮৭২; মুসলিম ১৭৮-(১৫৮/৯৬)
এবারের বিশ্ব নবীর জন্ম  ও জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
নবী কুলের সর্দার মহানবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) আসহাবে ফীলের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খৃষ্টাব্দের ১২ই বরিউল আউয়াল সোমবার সুবেহ সাদেকের সময় জন্মগ্রহণ করেন।
* বংশ : মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন।
* পরিচয় : রাসুল(সঃ)-এর সম্মানিত পিতার নাম আবদুল্লাহ্, মাতার নাম আমিনা, এবং দাদার নাম আবদুল মুত্তালিব বিন হাশিম এবং নানার নাম ওহাব বিন আবদে মানাফ।
বিবাহ্ : হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর বয়সী হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদের সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সন্তানাদি : রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দুই পুত্র (কাসিম এবং আবদুল্লাহ্ (রাঃ)) এবং চার কন্যা (হযরত যাইনব (রাঃ), হযরত রুকাইয়া (রাঃ), হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) এবং ফাতিমা (রাঃ))।
* নবুওয়াত লাভ : রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর বয়স যখন ৪০ বছর পূর্ণ হয়, তখন তাঁকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়। সে দিন ছিল ১৭ই রমাজান মতাবেক ৬ই আগষ্ট-৬১০ খৃষ্টাব্দ।
* ইসলামের দাওয়াত : নবুওয়াত প্রাপ্তির পর সাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথম তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। তখন থেকে তিনি প্রকাশ্যভাবে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন।
ওফাত : রাসূল (সঃ) ৬৩ বছর বয়সে ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার দুপুরের পর রফীকে আ'লা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে গমন করেন । অতঃপর খলীফা নির্বাচনের কাজসমাধা করে ১৪ই রবিউল আউয়াল রাতে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-এর গৃহে (রওযা মুবারকে ) রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে সমাহিত করা হয়
সবশেষে এটাই বলি।।
বাস্তবে রাসূল (সা.) হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাকে জেনেছে, তারা তাঁকে ভালোবেসেছে; যত বেশি জেনেছে, তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাঁকে জানেনি, তাঁরা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না-দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।
ধন্যবাদ সবাইকে আমাদের সাথেই থাকুন।

Friday 11 October 2019

নবীজীর মাদানী জীন্দেগীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা।

 এবারে আলোচনা করব দ্বিতীয় বিষয়  তথা। 
মাদানি জিন্দেগীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা ঃ
এক নযরে মদিনার জিন্দেগীঃ
১ম প্রথম হিজরীতে মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়।এবং সহধর্মিণীদের জন্য মসজিদের পাশেই বাসভবন নির্মাণ, আযানের সূচনা, এবং ইয়াহুদীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি। 
প্রসঙ্গঃ
===========
নবীগণের জীবন কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নবী করিম [ﷺ ]-এঁর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নবী করিম [ ﷺ ]-এঁর এরশাদ করেনঃ
“সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হলো নবীগণের, তারপর অলি-আল্লাহগণের তারপর সাধারণ মো’মেনগণের।”(বেদায়া)
কয়েক মাস যেতে না যেতেই ইয়াহুদীরা মদিনা চুক্তি ভঙ্গ করে গোপনে মক্কার কোরাইশদের সাথে আঁতাত গড়ে তোলে। অপরদিকে মদিনার আদিবাসী আউছ ও খাজরাজ গোত্রের মধ্য হতে একদল মোনাফেকের সৃষ্টি হয়। এরা প্রকাশ্যে মুসলমান হলেও ভিতরে ভিতরে ইয়াহুদী ও কোরাইশদের সাথে যোগ দেয়। এদের সর্দার ছিল আবদুল্লাহ ইবনে ওবাই। সে নবী করিম [ ﷺ ]-এঁর পিছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়তো। কিন্তু মসজিদের বাইরে গেলেই তার মোনাফেকী শুরু হতো। সে মদিনার সম্ভাব্য নেতা হতে যাচ্ছিল। নবী করিম [ﷺ ]-এঁর আগমনের ফলে তার সে আশা চূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। এই মোনাফেকরাই ইসলামের ক্ষতি করেছে বেশী। এদের আহবানেই মক্কার কোরাইশরা বার বার মদিনা আক্রমণ করতে সাহস পেয়েছিল। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বদেরর যুদ্ধ, তৃতীয় হিজরীতে ওহুদের যুদ্ধ এবং পঞ্চম হিজরীতে খন্দকের যুদ্ধে মুনাফিকদের যোগসাজশেই মক্কার কোরাইশরা আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করে। তারপর থেকেই কোরাইশদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায়।
৫ম হিজরী পর্যন্ত নবী করিম [ﷺ ] আত্মরক্ষামূলক জিহাদ পরিচালনা করতেন। ৬ষ্ঠ হিজরী সন থেকে ইতিহাসের গতি ফিরে যায়। নবী করিম [ ﷺ ] খন্দকের যুদ্ধের পর থেকেই আক্রমণাত্মক যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম হন। খায়বার, মুতা, মক্কা বিজয়, হুনাইন, তায়েফ ও তাবুক প্রভৃতি যুদ্ধে নবী করিম [ ﷺ ] মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এসব যুদ্ধে কাফেরগণ পর্যূদস্ত হয়ে যায়। গোটা আরব উপদ্বীপে (জাযিরাতুল আরব) ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডীন হয়। নবী করিম [ﷺ ] ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে পরিণত হয়। মক্কী জিন্দেগীতে ইসলামের বিধি-বিধান পূর্ণ বাস্তবায়িত করা সম্ভব ছিল না। কেননা, সেখানে মুশরিক শাসন ও প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান ছিল।
ইসলামের মূল পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে ১টি বুনিয়াদ অর্থ্যাৎ কলেমা “ ﻟَﺎ ﺍِﻟِﻪَ ﺍِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺭَّﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪَ ﷺ ” মক্কাতে জারি করতে পেরেছিলেন। বাকী ৪টি রোকন - নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত মদিনাতে এসে বাস্তবায়িত করেন। ইসলামের অন্যান্য হুকুম আহকাম এবং বিধি বিধান মদিনাতেই নাযিল হয়। সুতরাং মদিনার জীবন কন্টকাকীর্ণ হলেও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ এ সময়েই হয়েছিল। সাফল্যের আনন্দ ও ইসলামের আনন্দ ও ইসলামের পূর্ণ বিধান প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ মদিনাতেই হয়েছিল। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে নবী করিম [ ﷺ ]-এঁর হিযরতের সুদূর প্রসারী সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে - হিজরত প্রকাশ্যভাবে দেশ ত্যাগ হলেও প্রকৃতপক্ষে ছিল বিশ্ববিজয়ের সোপান এবং সাফল্যের ধার উৎঘাটন। এবার ক্রমান্বয়ে ঘটনাবলী বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।
          আল্লহতে যার পুর্ন ইমান
৷ ৷    কোথা সে মুসলমান, 
৷ ৷ ৷ কোথা সে শিক্ষা আল্লাহ ছাড়া
৷ ৷   ত্রিভুবনে ভয় করিত না যারা, 
. আযাদ করিতে এসেছিল যারা 
সাথে লয়ে পাক কুরআন

নবীজীর মাক্কাওমাদানি জীবন

আজকের বিষয় সম্পর্কে সবাই অবগত আছেন আর তা হলো নবীজী (সা.)এর মাদানি জীবন নির্ধারিত এ বিষয়ে ওপর আমি আমার আলোচনা কে দুটি স্তরে ভাগ করেছি।
১,হিজরতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা।
২,মাদানি জিন্দেগীর সং ক্ষিপ্ত  রূপরেখা।
এবার চলুন বন্ধুরা মুল আলোচনায় চলে যাই।
আজ আলোচনা করব আমি প্রথম বিষয় নিয়ে।
রাসুল (সা.) একাধারে ১০টি বছর আরব গোত্রগুলোকে বিশেষ ভাবে মক্কার কাফেরদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন।আরবের এমন কোন মাহফিল আর মজলিস বাদ নেই, যেখানে গিয়ে তিনি লোকদের সত্যের দিকে আহবান করেননি। এভাবেই দীর্ঘ সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে আওস গোত্রের কিছু লোকের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মদীনায় ইসলামের যাত্রা করার তাওফিক দিলেন। মদিনায় ইসলামের প্রসার হবে এটা আল্লাহর দরবারে মঞ্জুর ছিল। এজন্যই তো দেখা যায় ইসলামের কল্যানেই আওস ও খাজরাজ গোত্রের দীর্ঘদিনের ঝগড়া মিটে যায়। বাইয়াতে আকাবার গিরিপথ বেয়ে ইয়াসরিব মদীনাতুন্নবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।ফলে মুসলমানরা একে একে মক্কা ছেড়ে মদীনায় পাড়ি জমান।এক সময় হজরত রাসুলে কারীম (সা.)ও হযরত আবু বকর (রা.)হিযরত করলেন। পথিমধ্যে সাওর  পর্বতের গুহায় আত্নগোপন করেন। আল্লাহ তাদেরকে গায়েবী মদদে বাচালেন।যার বিস্তারিত ঘটনা সবারই জানা আছে।।
বন্ধুগণ,
মমদীনায় প্রবেশের পূর্বে রাসুলে কারীম(সা.) কোবা নগরীতে প্রবেশ করেন । সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৪দিন কোবায় অবস্থানের পর নবী (সা.) মদীনার দিকে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে যার বাড়ি অতিক্রম করতেন তিনিই স্বীয় গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। এভাবে তিনি আল্লাহর ইংগিতে এক সময় মদীনায় চলে আসলেন। তারপর, প্রিয়নবী ( সা.) নগরীতে প্রবেশ করার সাথে সাথে পর্দানশীন মহিলা ও শিশু বাচ্চারা উন্মুক্ত ছাদের উপরে এসে আনন্দে গাইতে লাগলো।
ত্বালায়াল বাদরু আলাইনা,
মিনছানি ইয়াতিল অদায়।
এই সংগীত তারা পরিবেশন করতে থাকেন।
প্রিয় বন্ধুরা পড়ে আলোচনা করব দ্বিতীয় বিষয় নিয়ে তথা মাদানি জিন্দেগীর রূপরেখা নিয়ে। ধন্যবাদ সবাইকে আমাদেরসাথেইথাকু।


Welcome to my website

Hello everyone

This is my new blog here to introduce you.

Everyone connect with us.

Thanks
Hasan